ফরজ নামাজের পর দীর্ঘ মুনাজাতের হুকুম

আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি মসজিদে ফরজ নামাজের পর লম্বা মুনাজাত, বয়ান, দান কালেকশন সহ আয়াতুল কুরসী এবং বিভিন্ন মাসনুন দোয়া সমুহ পাঠ করতে দেখা যায়। অথচ তা করা সুন্নাহ বহির্ভূত কাজ।

জুমার নামাজের সানী আজানের আগেই দান কালেকশন করা হয় অনেক মসজিদে তা সম্পূর্ণ ঠিক আছে। তবে সালাম ফেরানোর পর কালেকশন করলে পরবর্তী সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজগুলো মাকরূহ হয়ে যায়।

জোহর, মাগরিব ও ইশার ফরজ নামাজের পর সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ রয়েছে। দোয়া ও কালেকশনের চেয়ে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের গুরুত্ব বেশী। আসুন কিতাব থেকে দেখি…..

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ إِذَا سَلَّمَ لَمْ يَقْعُدْ إِلاَّ مِقْدَارَ مَا يَقُولُ ‏ “‏ اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ ‏”‏ ‏.‏

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাম ফিরানোর পর নিম্মোক্ত দুআ‘ পড়ার অতিরিক্ত সময় বসতেন নাঃ “হে আল্লাহ্! আপনিই শান্তি বিধাতা এবং আপনার পক্ষ থেকেই শান্তি আসে। হে মহিমান্বিত ও গৌরবময় সত্তা! আপনি প্রাচুর্যময়”।

(মুসলিম ৫৯২, তিরমিযী ২৯৮, নাসায়ী ১৩৩৮, আবূ দাঊদ ১৫১২, ইবেনে মাজাহ ৯২৪, আহমাদ ২৩৮১৭, দারিমী ১৩৪৭, মেশকাত ৯৬০। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবূ দাউদ ১৩৫৪।)

আল্লামা মোল্লা আলী কারী রাহিমাহুল বারী তার মিরকাতুল মাফাতীহের ৩য় খন্ড ৬৫ ও ৬৬ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এখানে ফরজ নামাজ দ্বারা ঐ নামাজ উদ্দেশ্য যে নামাজের পর সুন্নত নামাজ আছে। আর যে নামাজের পর সুন্নাত নামাজ নেই (যেমন ফজর ও আসর নামাজ) সে নামাজ উদ্দেশ্য নয়। কেননা ফজর নামাজের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত রাসূল সাঃ নিজ মুছল্লায় বসে থেকে তাসবিহ তাহলীলে রত থাকতেন তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। মোল্লা আলী কারী আরো বলেন যে, আল্লামা কাজী এয়াজ র. বলেছেন, হযরত আনাস রাঃ থেকে যে হাদীস বর্ণিত আছে তদ্বারা ফজর ও আসর নামাজের পর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফজিলত ও মুস্তাহাব জিকির সমূহ বুঝানো হয়েছে। ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. বলেন, কিছু ওয়াক্ত নামাজের পর রাসূল সাঃ কিছু সময় বসে থাকতেন আর কিছু ওয়াক্ত নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই উঠে যেতেন।

এজন্য ফতোয়া হলো— يكره تأخير صلاة السنة الراتبة عن صلاة الفريضة যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাতে রাতেবা বা মুয়াক্কাদাহ নামাজ আছে সে নামাজের পর “আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম” দোয়াটি পড়ার চেয়ে বেশী সময় বসে থাকা মাকরূহ! রদ্দুল মুহতার ১/৫৩১

يقول ابن عابدين رحمه الله :
” أما ما ورد من الأحاديث في الأذكار عقيب الصلاة فلا دلالة فيه على الإتيان بها قبل السنة ، بل يحمل على الإتيان بها بعدها ; لأن السنة من لواحق الفريضة وتوابعها ومكملاتها ، فلم تكن أجنبية عنها ، فما يفعل بعدها يطلق عليه أنه عقيب الفريضة . ” رد المحتار ” (1/531)
আল্লামা ইমাম শামী বলেন, হাদীসে যেসকল জিকির ফরজ নামাজের পর পড়ার কথা বলা হয়েছে তা দ্বারা এটা বুঝায় না যে, সেগুলো সুন্নাতের আগে পড়তে হবে। বরং পরে পড়ারই অবকাশ রাখে। কেননা সুন্নাত নামাজ হলো ফরজের অনুগামী ও পূর্ণতাদায়ক। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৩১)

ফতোয়ায় দারুল উলুম দেওবন্দ ৪র্থ খন্ড ১৬৪ পৃষ্ঠায় আদ্দুররুল মুখতারের একটি এবারত উল্লেখ করা হয়েছে, ويكره تأخير السنة الا بقدر اللهم انت السلام الخ. আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম দোয়াটি পড়ার চেয়ে বেশী সময় সুন্নত নামাজকে বিলম্ব করা মাকরূহ।

গায়াতুল আওতার কিতাবেও উক্ত দোয়া পাঠের চেয়ে বেশী সময় বিলম্ব করা মাকরূহ তাঞ্জীহ বলা হয়েছে। শামী কিতাবে আরো বলা হয়েছে, ফরজের পর সুন্নাত নামাজ তা নব গঠিত সুন্নত নয়। ফরজের পরপরই সুন্নাত আদায় কারাও সুন্নাত। ফরজ ও সুন্নাত নামাজের মধ্যখানে কথা বললে সুন্নাতের পূর্ণ ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

দেখুন: মিরকাতুল মাফাতিহ ৩য় খন্ডের ৬৫ ও ৬৬ পৃষ্ঠা এবং ফতোয়ায় দারুল উলুম দেওবন্দ মুদাল্লাল ও মুকাম্মাল ৪র্থ খন্ড ১৬৪ পৃষ্ঠা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top