ইমামাহ বা পাগড়ীর পরিমাপঃ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন প্রকার মাপের পাগড়ী পরিধান করতেন। বাড়ী বা বাসায় অবস্থান করাকালীন তিন হাত পরিমাপের পাগড়ী পরিধান করতেন। বাড়ী বা বাসার বাইরে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ব্যবহার করতেন ৭ হাত। যার প্রস্থ ছিল এক হাত থেকে ২ হাত। আর বিশেষ বিশেষ দিন তথা ঈদ, জুমুয়া ইত্যাদিতে ১২ হাত পরিমাপের পাগড়ী পরতেন।
দলীল-
√ আনওয়ারুল মাহমুদ-২/৪৪২
√ উরফুশ শাজী-১/৩০৪,
√ আওনুল মা’বুদ-৪/৯৬,
√ তুহফাতুল আহওয়াজী৫/৪১৪,
√ তা’লিকুছ ছবীহ-৪/৩৮৯,
√ মিরকাত-৮/২৫০,
√ জামউল ওয়াসাইল-১/২০৭,
√ খছাইলে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৯১,
√ আখলাকুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-১৮১
পাগড়ীর শামলা ও তার পরিমাপঃ ইমামাহ বা পাগড়ী বাধার পর পাগড়ীর যে অংশ পিছনে পিঠের উপর ঝুলিয়ে রাখা হয় তাকে শামলা বলে। শামলাসহ পাগড়ী পরা সুন্নত। ইহা ব্যতীত পাগড়ী পরা শিয়া ও শিখদের আলামত। অর্থাৎ শিয়া ও শিখ সম্প্রদায় শামলা ছাড়া পাগড়ী পরে। আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে, শিয়া ও শিখরা মুসলমান নয়।
পাগড়ীর শামলা হবে এক বিঘত বা অর্ধ হাতের কিছু বেশি এবং এক হাতের কিছু কম। তবে চার আঙ্গুল পরিমাণের কম ও এক হাতের বেশি হওয়া মাকরূহ। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’কাঁধের মাঝামাঝি অর্থাৎ পিঠের উপর ঝুলিয়ে রাখতেন। তবে কখনো কখনো ডান কাধের উপর দিয়ে সামনে রাখতেন। কিন্তু; শামলা বাম কাধের উপর দিয়ে সামনে রাখা বিদয়াত।
দলীল-
√ মুযাহিরে হক্ব-৩/৫৩৪,
√ আশয়াতুল লুময়াত-৩/৫৪৫,
√ আরিদ্বাতল আহওয়াযী-৭/২৪৩,
√ আওনুল মা’বুদ-৪/৯৫,
√ তুহফাতল আহওয়াযী-৫/৪১১,
√ তানযীমুল আশতাত-৪/১৬৭
পাগড়ীর রং : হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত সাদা, কালো ও সবুজ রংয়ের পাগড়ী মুবারক পরিধান করতেন। সবচেয়ে বেশি পরতেন কালো। সবুজ, কালো রংয়ের তুলনায় একট কম পরতেন। আর সাদা তার চেয়ে আরো কম সময় পরতেন।”
দলীল-
√ মুছান্নিফে ইবনে আবী শাইবাহ৮/২৪১,
√ যরকানী-৬/২৫৭,
√ মুসলিম শরীফ-১/৪৪০,
√ শরহে নববী-৫/১৩৩,
√ শরহুল উবাই ওয়াস সিনসী-৪/৪৬৭,
√ আবু দাউদ শরীফ-২/২০৯,
√ বযলুল মাজহুদ-৬/৫১,
√ আওনুল মা’বদ-৪/৯৫,
√ নাসায়ী শরীফ-২/২০০০,
√ ইবনু মাযাহ-২৬৪,
√ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল-৪/৩০৭,
পাগড়ীর কতিপয় আদব বা সুন্নত ত্বরীক্বাঃ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম- বলে পাগড়ী পরা সুন্নত।
দলীল-
√ যুরকানী-৬/২০৮
পাগড়ী সুতি কাপড়ের হওয়া সুন্নত। ওযুর সাথে পাগড়ী বাঁধা সুন্নত। ক্বিবলা মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পাগড়ী বাঁধা সুন্নত। পাগড়ীর শামলা-এর মাথা মুখে কামড় দিয়ে ধরে পাগড়ী বাঁধা সুন্নত। টুপির উপর পাগড়ী পরা সুন্নত। মুসলমানগণ টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করে। আর মুশরিকরা টুপি ছাড়া পাগড়ী পরিধান করে।
দলীল-
√ মিরকাত-৮/২৫০,
√ জামউল ওয়াসায়িল-১/২০৭,
√ আল মাদখাল- ১/১০৬,
√ হুজ্জাতত্ তাম্মাহ-৫৬,
√ আবু দাউদ শরীফ-২/২০৯,
√ তিরমিযী শরীফ-১/২১০,
√ মিশকাত শরীফ৩৭৪,
পাগড়ী বাধার সময় সিজদার স্থানকে উম্মক্ত রাখা আবশ্যক। কারণ, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে পাগড়ীর প্যাঁচের উপর সিজদা করা মাকরূহ। ”
দলীল-
√ মুছান্নাফ লি আব্দির রাজ্জাক-১/৪০১
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ী ই’তিজার করতে নিষেধ করেছেন। ই’তিজার হচ্ছে পাগড়ী গোলাকার করে বেধে মাথার উপরিভাগকে খোলা রাখা। যা মাকরূহের অন্তর্ভক্ত। ” (বর্তমানে স্টাইলিশ সংগীত শিল্পীরা এমন করে থাকেন)।
দলীল-
√ বাদাইউস সানায়ে-১/২১৬,
√ আলমগীরী-১/১০৬,
√ খুলাছাতল ফতওয়া-১/৫৭
রুমাল দিয়ে পাগড়ী বাঁধা মাকরুহ। যদি কেউ সবসময় পাগড়ী বাঁধেন তাঁর জন্য দুয়েকবার ওজরবশত পাগড়ী সাথে না থাকলে তখন রুমাল দিয়ে বাঁধলে মাকরুহ হতে রুখসাত পাবেন।
দলীল –
√রাহবার, ছারছীনা শরীফ হতে প্রকাশিত মরহুম আমজাদ হোসাইন প্রিন্সিপাল হুজুরের প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য